--> ক্যারিয়ার হিসাবে নার্সিং
Home Nursing Admission 2019 / Nursing Zone

নার্সিং প্রফেশনে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে


অনেকেই মানুষের সেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে চান। এমনই সেবামূলক এক পেশা হচ্ছে নার্সিং। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায়, দিন দিন বাড়ছে আমাদের জনসংখ্যা, বাড়ছে হাসপাতাল। আমাদের দেশে এখন প্রায় সব শহরেই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নার্সের চাহিদাও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী একটি দেশে চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হওয়া উচিত ১:৩ । কিন্তু বাংলাদেশে এ অনুপাত ২:১ । তবে প্রায় সময় দেখা যায়, অনেক প্রতিষ্ঠানেই দক্ষ নার্সদের অভাব রয়েছে। শুধু আহত, অসুস্থ এবং পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরাই নন, নার্সিং সেবা প্রয়োজন অন্যদেরও। চাইলে এ পেশায় আসতে পারেন আপনিও। নার্সিং পেশায় একই সাথে মানবসেবার পাশাপাশি অনায়াসে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে নার্সদের চাহিদা। আসলে এটি এমন একটি পেশা, যার চাহিদা স্থান, কাল, পাত্রে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের দেশে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারদের যতটা চাহিদা রয়েছে এবং অভিভাবকদের এসব বিষয়ে পড়ানোর যে প্রবণতা রয়েছে, নার্সিং পেশাতে পড়ার এবং পড়ানোর প্রবণতা তেমন একটা নেই। নার্সিং বিষয়ে অনেকের স্পষ্ট ধারণাও নেই। এ বিষয় নিয়ে কোথায় পড়ালেখা করা যায় কিংবা কী ধরণের সুযোগ সুবিধা রয়েছে এবং কীভাবে এ পেশায় ক্যারিয়ার গঠন করা যায়, সেসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো আজকের নিবন্ধে।

What is NURSING?

Nursing encompasses autonomous and collaborative care of individuals of all ages, families, groups and communities, sick or well and in all settings. It includes the promotion of health, the prevention of illness, and the care of ill, disabled and dying people. (WHO)

নার্সিং 

নার্সিং শব্দের আভিধানিক অর্থ সেবা করা বা তত্ত্বাবধান করা। এই নার্সিং শব্দ থেকেই এসেছে নার্স শব্দটি, নার্স মানে যে সেবা প্রদান করে।
একজন নার্স হেল্থ কেয়ার টিমের সাথে কাজ করে এবং তারা বিভিন্ন বয়সের এবং সম্প্রদায়ের অসুস্থ বা ভাল মানুষের সেবা প্রদান করে হাসপাতালে বা অন্যান্য সেটিংসে। নার্সের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি করা, অসুস্থতা প্রতিরোধ করা এবং অসুস্থ, অক্ষম ও মুমূর্ষু মানুষের যত্ন নেওয়া।
নার্সিং এমন একটি পেশা যা সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। এ পেশার সাথে জড়িত দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি নার্স বা সেবিকা বা সেবক নামে পরিচিত।

কাজের ধরণ 

কাজের ক্ষেত্র ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আপনি Assistant Nurse, Staff Nurse, Senior Staff Nurse (SSN), Nursing Supervisor, Deputy Nursing Superintendent, Nursing Superintendent হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি নার্সিং ইনস্টিটিউট বা কলেজে Nursing Lecturer, Nursing Assistant Professor, Professor, Vice Principal, Principal হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এছাড়া, নার্সিং অধিদপ্তরে Director, Deputy Director (Admin), Deputy Director (Education), Project Officer, Assistant Director (Admin), Assistant Director (Education) পদেও কাজ করতে পারেন।
সুতরাং, কাজের ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করবে আপনার কাজের ধরন কী রকম হবে। তবে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজসমূহ একজন নার্স মূল দায়িত্ব হিসেবে পালন করে থাকেন।
• একজন নার্সকে সাধারণত চিকিৎসকের নানা কাজের সহকারী হিসেবে হাসপাতাল বা ক্লিনিকের আউটডোর ও ইনডোর, অপারেশন থিয়েটারে কাজ করতে হয়।
• ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
• ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে সঠিকভাবে ঔষধ খাওয়ানো।
• রোগীর স্বাস্থ্যের অগ্রগতি বা অবনতি সম্পর্কে ডাক্তারকে নিয়মিত জানানো।
• রোগীর সার্বিক পরিচর্যার দায়িত্ব নেয়া।
• ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ও পরামর্শ সঠিকভাবে বোঝা ও সে অনুযায়ী রোগীর পরিচর্যা করা।
• রোগীর সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা ও ডাক্তারকে জানানো।
• রোগীর স্বাস্থ্যের অগ্রগতি ও অবনতি সম্পর্কে নিয়মিত প্রতিবেদন তৈরি করতে পারা।

পড়ালেখার সুযোগ 

এ পেশা শুরুর আগে আপনাকে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং, তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি অথবা চার বছর মেয়াদি ব্যাচেলার অব সায়েন্স ইন নার্সিং (BSc in Nursing) কোর্স করতে হবেএছাড়া অর্থোপেডিকস, সাইকিয়াট্রিক, পেডিয়াট্রিক, সিসিইউ, আইসিইউ ও কার্ডিয়াক নার্সিংসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর এক বছর মেয়াদী কোর্স চালু আছে।

নার্সিং ও মিডওয়াইফ অধিদপ্তর তথ্যমতেঃ

# দেশে বর্তমানে সরকারি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং মোট ইনস্টিটিউট সংখ্যা: ৪৩ টি, মোট আসন: ২৫৮০ টি।
# আর বেসরকারি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এন্ড মিডওয়াইফারি এর জন্য মোট ইন্সটিটিউট: ১৬৫ টি, আসন: ৭৯৮০ টি।
# ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি (৩ বছর): মোট ইনস্টিটিউট সংখ্যা: ৩৮ টি, মোট আসন: ৯৭৫ টি। উল্লেখ্য, ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য এবং বেসরকারি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি: মোট ইন্সটিটিউট: ১৭ টি, মোট আসন: ৫৯০ টি।
এছাড়া চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং এর জন্যঃ
মোট সরকারি কলেজ সংখ্যা: ১৮ টি, আসন: ১৪৩৫ টি এবং বর্তমানে বাংলাদেশে ৫৯ টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৭০০ আসনে BSc in Nursing পড়ার সুযোগ রয়েছে।

নার্সিংয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কোর্সের শেষে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এতে উত্তীর্ণ হবার মাধ্যমে নিবন্ধিত হলেই পেশা হিসাবে নার্সিং নিতে পারবেন। সরকারি - বেসরকারি সব হাসপাতালে চাকরি করা যায়।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে নার্সিং ভর্তির নতুন নীতিমালাঃ ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য


১. সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এখানে ন্যূনতম পাস যোগ্যতা ৩০ নম্বর পেতে হবে।
২. ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা: (২০১৯-২০)
# বি এসসি ইন নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে নূন্যতম যোগ্যতা SSC: Minimum GPA: ২.৫, HSC: Minimum GPA: ২.৫, SSC+HSC Total GPA minimum GPA: ৬.০০, SSC & HSC তে সায়েন্স বিভাগ এবং জীববিজ্ঞানে পাশ মার্ক থকতে হবে। এবং HSC পাসের সাল ২০১৭/১৮/১৯ হতে হবে।
# ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এন্ড মিডওয়াইফারী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে নূন্যতম যোগ্যতা SSC: Minimum GPA: ২.৫, HSC: Minimum GPA: ২.৫, SSC+HSC Total minimum GPA: ৫.৫০ লাগবে আর, যেকোনো বিভাগ যেমনঃ সায়েন্স, কমার্স বা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আবেদন করতে পারবে এবং পাসের সাল SSC ২০১৫/১৬/১৭ এবং HSC ২০১৭/১৮/১৯ হতে হবে।
# ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে নূন্যতম যোগ্যতা SSC: Minimum GPA: ২.৫, HSC: Minimum GPA: ২.৫, SSC+HSC Total minimum GPA: ৫.৫০ লাগবে আর, যেকোনো বিভাগ যেমনঃ সায়েন্স, কমার্স বা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আবেদন করতে পারবে এবং পাসের সাল SSC ২০১৫/১৬/১৭ এবং HSC ২০১৭/১৮/১৯ হতে হবে।

কোর্সের বিষয় সমূহ 

বিদেশি কারিকুলামের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই দেশের এসব কোর্সের পাঠ্যসূচি তৈরি করা হয়েছে। এ কোর্সের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ফান্ডামেন্টাল অফ নার্সিং, এনাটমি, ফিজিওলোজি, প্যাথফিজিওলজি, ফারমাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, কমিউনিটি নার্সিং, কম্পিউটার, ইংরেজি, নিউট্রিশন অ্যান্ড ডাইটেটিকস, পপুলেশন কন্ট্রোল অ্যান্ড ফ্যামিলি প্লানিং, ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেল্থ নার্সিং, সাইকোলজি, সাইকিয়াট্রিক নার্সিং, রিসার্চ স্টাডিজ, নার্সিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, নার্সিং ম্যানেজমেন্ট ও ইপিডেমিওলজি সহ বিভিন্ন বিষয়।

দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ 

বাইরের দেশগুলোয় MSc, PHD করার সুযোগ আছে। এছাড়া ট্রেইনিং, ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ আছে। অধিকাংশ উন্নত দেশগুলোয় National Council Licensure Examination (NCLEX) skill, work experience ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে সহজেই মাইগ্রেশন করার সুযোগ রয়েছে।

কাজের সুযোগ 

আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় নার্সের সংখ্যা এখনো কম। তাই নার্স হিসাবে নিবন্ধন পাবার পর তুলনামূলকভাবে কম সময়ে চাকরি পাওয়ার সম্ভবনা বেশি।
এ বিষয়ে পড়ার পর দেশ-বিদেশে সর্বত্রই ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, সমাজসেবা অধিদপ্তর, হোটেল, মোটেল, এনজিও, আইএনজিও, হেল্থ প্রজেক্ট, রিসার্চ এমনকি পর্যটন কর্পোরেশনেও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে তো বটেই, বিদেশেও নার্সিং পেশার দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকদের চাহিদা রয়েছে ব্যপক।
তবে বিদেশে চাকরি পেতে হলে নার্সদের প্রশিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি ইংরেজিতে পারদর্শী হতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক নার্স সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন স্কটল্যান্ড, সুইডেন ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের তেরটিরও অধিক দেশে কর্মরত রয়েছেন। ইংরেজি ভাষা ও উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ নার্স গড়ে তুলতে পারলে এই খাতে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
নার্স থেকে পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্স ও সুপারিন্টেনডেন্ট বা নার্সিং ট্রেনিং কলেজের প্রশিক্ষক হওয়ার জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞতা ও বিশেষায়িত কারিগরি দক্ষতা।
নার্সিং পেশাটি একটি দায়িত্বের পেশা। এ পেশায় আসতে হলে মানুষের সেবার মানসিকতা থাকতে হবে। এখানে মানুষের সেবা করা যায় খুব কাছ থেকে। সম্ভাবনাময় এ পেশায় রয়েছে আর্থিক সচ্ছলতা ও মর্যাদার জীবন। সেবাধর্মী এ পেশায় আপনিও অর্জন করতে পারেন সামাজিক মর্যাদা ও ভালো আয়ের সুযোগ।
তথ্যটি শেয়ার করলে অনেকেই জানতে পারবে এবং বিএসসি নার্সিং পড়তে অনুপ্রাণিত হবে..
এই তথ্যগুলো বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ওয়েবসাইট, বিভিন্ন অনলাইন আর্টিকেল (প্রথম আলো, ইউথ কার্নিভাল) থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং পরবর্তিতে এডিট ও মডিফাই করে লেখা হয়েছে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

Read Also:

কোন মন্তব্য নেই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

to Top