--> ভর্তিযুদ্ধের সৈনিকদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি
Home Versity Zone

কথায় আছে, “সময় গেলে সাধন হয়না”। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটা মানুষের জীবনে সময়ের মূল্য সবচেয়ে বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধের মৌসুমে। এই সময়ের একেকটি প্রহর আক্ষরিক অর্থেই যেন মুক্তোর চেয়ে দামী। বারো বছরের স্কুল কলেজের অর্জিত সাফল্যগুলো ম্লান হয়ে যেতে পারে এই সময়টুকুর সামান্য অপচয়, অবহেলায়। এই ব্যাপারগুলো তোমরা খুব ভাল করেই জানো!
আজ কোন গুরুগম্ভীর উপদেশ শোনাতে আসিনি তোমাদের। শুধুমাত্র ভর্তিযুদ্ধের কঠিন পথ পাড়ি দিতে গিয়ে নিজের যে অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি হয়েছে সেগুলো সংক্ষেপে শেয়ার করতে চাই।

বাক্সে বাক্সে বন্দী স্বপ্ন

তুমি যখন ছোট ছিলে তখন তোমার স্বপ্ন ছিল বাঁধনছাড়া। কেউ চাইতে ডাক্তার হতে, কেউবা প্রকৌশলী, কেউ বিজ্ঞানী, বৈমানিক, গায়ক, নায়ক এমনকি আইসক্রিম বিক্রেতা হওয়ার চিন্তাও কারো কারো মাথায় ছিল নিশ্চয়ই! যত বড় হতে লাগলে ততোই শেকলে বাঁধা পড়তে লাগলো স্বপ্নগুলো। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দোরগোড়ায় এসে দেখছো, বেছে নিতে হবে যে কোন একটি পথ। নিজেকে একটিবার জিজ্ঞেস করো, তুমি তোমার স্বপ্নের পথে পা বাড়াচ্ছো তো?

ঘুরে এস জৈব রসায়নের জগৎ থেকে!

জৈব রসায়ন এমন একটি বিষয় যেটি অনেকের কাছেই বিভীষিকা-স্বরূপ। সঠিক পদ্ধতিতে জৈব রসায়নের অধ্যায়গুলো পড়লে বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে যায়।

আমারও পরাণ যাহা চায়

আমাদের দেশে গুরুজনেরা অনেক সিদ্ধান্তই চাপিয়ে দেন আমাদের উপর ছোটবেলা থেকে। অনেকে সন্তানের জন্মের সময়ই ঠিক করে রাখেন, “ওকে বড় হলে ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার বানাবো!” কিন্তু একটা জাতি তো কেবল ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে চলে না! প্রত্যেকের নিজের একটা স্বপ্ন থাকে। তোমাদের কারো আগ্রহ আছে সাহিত্যে, কারো খেলাধুলায়, কারো চলচ্চিত্রে, কেউবা হতে চাও উদ্যোক্তা।
আমি বলবো, তুমি তোমার স্বপ্নের পথেই এগিয়ে চলো। সমাজ তোমাকে নানা রকম ভয় দেখাবে, ব্যর্থতার ভয়, অর্থকষ্টের ভয়, প্রতিষ্ঠা না পাওয়ার ভয়। কিন্তু তুমি যদি গন্তব্যে অটল থাকো, কঠোর পরিশ্রম করো, সর্বোপরি নিজের কাছে স্বচ্ছ থাকো, সাফল্য আসতে বাধ্য। একটাই তো জীবন, সাহস করে একটু ঝুঁকি না নিলে জানবে কিভাবে, জীবনটা কত রোমাঞ্চকর, শ্বাসরুদ্ধকর সুন্দর হতে পারে?

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট

লক্ষ্য তো ঠিক করলে, কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণে শতভাগ অটল আছো তো? প্রস্তুতির সময় বড় ভাইয়া আপুরা সবসময় পইপই করে বলে দেন, “খবরদার কখনো শুধু একটা টার্গেটে ফোকাস করবি না! অন্তত দুই তিনটা অপশন রাখবি হাতে!” তারা এটা ভাল চেয়েই বলেন, কিন্তু এতে হিতে বিপরীতও হতে দেখেছি অনেক। একইসাথে বুয়েট আর মেডিকেলের জন্য, ঘ ইউনিট আর আইবিএ-র জন্য পড়তে গিয়ে কোথাওই টিকেনি এমন অজস্র মানুষকে দেখেছি নিজ চোখে। আবার শুধুমাত্র আইবিএ-র জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আইবিএ-তেই টিকেছে এমন পরিচিত মানুষও রয়েছে অনেক।

মজায় মজায় ইংরেজি শিখ!

তোমার স্বপ্নের পথে পা বাড়ানোর ক্ষেত্রে তোমার ইংরেজির জ্ঞান কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে!

        

        বিজয় নিশান উড়িয়েই ছাড়বে তুমি!


বিশ্বাসে মিলায় বিজয়

তিক্ত হলেও সত্য একটি কথা, তোমার মনে যদি বিন্দুমাত্র সংশয়ও থেকে থাকে যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না- আমি বলবো তোমার পরীক্ষা দেওয়ারই দরকার নেই। অতীতে মানুষ ঢাল তরবারি হাতে যুদ্ধ করতো, এখন যুগ পাল্টেছে, যুদ্ধের হাতিয়ার এখন কলম। মনে যত দ্বিধা সংশয় আছে সব এইমুহূর্তে ঝেড়ে ফেলো। মনে কেবল একটি শব্দ গেঁথে নাও- ‘বিজয়’!
ভর্তিযুদ্ধের ময়দানে তুমিও একজন সৈনিক। তরবারির লড়াইয়ে সৈনিকদের শরীরের মৃত্যু হতো, ভর্তিযুদ্ধে সফল হতে না পারা মানুষগুলোর স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে। মনে রেখো, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তুমি কোন কিছুর বিনিময়েই এই স্বপ্নকে হাতছাড়া হতে দিতে পারো না। কিছুতেই না। কোন মূল্যেই না। মনের বাঘকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দিবে না। অতীতে কি হয়েছিল, তুমি কলেজে ভালভাবে পড়ালেখা করোনি, ভর্তি কোচিং এ অনেকে তোমার থেকে বেশি মার্ক পায়, এত কম আসনের জন্য লড়ছে এত বেশি পরিক্ষার্থী- এসব নেতিবাচক চিন্তা মাথায় ঘেঁষতেও দিবেনা।

তুমি বাঁচবে বর্তমানে। “আজ” নতুন করে হবে তোমার সংগ্রামের সূচনা।
তুমি প্রত্যয়ী, তুমি বিপ্লবী। তুমি পারবে, তোমাকে পারতেই হবে! পানিতে ডুবে যাওয়া মানুষ ফুসফুসে একটুখানি বাতাসের জন্য যেভাবে মরণপণ ছটফট করে, তোমার সাফল্যক্ষুধা ঠিক তেমনই তীব্র হতে হবে। বিজয় নিশান উড়িয়েই ছাড়বে তুমি!

“I am the master of my fate, I am the captain of my soul.”

Read Also:

to Top