১৫০০সাল
-তসলিমা নাসরিন!
শত বর্ষ পরে এই কবিতাটি কেউ না কেউ পড়বে!
যে পড়বে সে যদি নারী হয়
সে কি তখনো কেবল নারী- ই??!
ধরে নিচ্ছি নারী নয়!
সে তখন আদ্যোপান্ত মানুষ!
সে আর চার দেওয়ালে বন্দি নেই!
তার পায়ে যে সহস্র বছরের শেকল ছিল সে শেকল নেই!
তার হাতে যে কুর্সি কাঁটা আর খুন্তি ছিল!
নেই!
হাতে উঠেছে কলম কাস্তে কোদাল আর কলকব্জা!
সে মানুষের মত হাঁটে,দৌড়ই, হা-হা হাসে!
মাছের মুড়ো খায়!
দুধের সরও!..
তাকে আর ভুগতে হয় না পুষ্টিহীনতায়!
সে যদি নারী হয়!
তাকে কেউ পাঠশালায় না পাঠিয়ে ঠেলে দিতে পারছে না জ্বলন্ত উনুনের কাছে!
তাকে আর পরাতে পারছে না বাল্যবিবাহের ফাঁস!
তাকে আর আবৃত করতে পারছে না ভূতুড়ে বোরখায়!
সে নিশ্চয় তখন দাবি করতে পারে সমান উত্তরাধিকার!
সে নিশ্চয় তখন দাবি করতে পারে জরায়ুর স্বাধীনতা-কন্যা জন্ম!
সে নিশ্চয় তখন দাবি করতে পারে চাঁদ বা সূর্যের নিচে অবাধ বসবাস!
যে পড়ছে এই কবিতা!
সে নারী বা পুরুষ হোক!
সে নিশ্চয় ধর্মের গ্রাস থেকে ইতিমধ্যে মুক্ত!
তাকে আর পাঁচ বেলা কপাল ঠুকতে হয় না মেঝে!
তাকে আর প্রসাদ খেতে হয় না ঠাকুরের!
মসজিদ-মন্দির ভেঙে গজিয়ে গেছে মনোলোভা ফুলের বাগান!
জুসমে জুলুসে নেই পীরের মাজার নেই!
স্বৈরাচারের উৎপাত নেই!
কাঁটাতার নেই!
বদলে দিগন্ত অবধি রজনীগন্ধার ঘ্রাণ!
মুগ্ধ ভালোবাসা!
শতবর্ষ পরে!...
নেতার বাড়িতে, শিক্ষাঙ্গনে, শহরে,গ্রামে কৃত্রিমদ্রিম বর্ষণ চলে গুলির??
ককটেলের!!
দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্য, ক্ষরা,ঘূর্ণিঝড়,সন্ত্রাসের দেশে অক্ষত আছে কি শহীদ মিনার??
স্বোপার্জিত স্বাধীনতা!?
অপরাজেয় বাংলা,জয়দেবপুরের মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিসৌধ??
তখনো কি একুশের ভোরে
খালি পায়ে ভিড় করে অগুণন বাঙালি??
তখনো কি বৈশাখে, শরৎে, অঘ্রাণে,ফাগুনে উৎসব হয়??
প্রথম প্রভাতের সাদা মেঘের নবান্নের ঝরাপাতার আহার??
তখনো কি মানুষ,মানুষের জন্য গান গায়??কাঁদে???
যে তুমি পড়ছো এ কবিতা!!
তুমি কি জানো??
শত বছর আগে কি ভীষণ স্বপ্নহীন অন্ধকারে একাকি হেঁটেছিলাম নত- লুচ্চো -নষ্ট মানুষেরা??
দারিদ্র্যে, পারমানবিক ধোঁয়ায়, অশিক্ষায়,অজ্ঞতায়,জ্বরায়, ব্যাধিতে ক্লান্ত-ক্লিষ্ট!
তুমি বা তোমরা নিশ্চয় হাতের মুঠোয় নিতে পারো সততা ও সমতার আলোকিত ব্রহ্মাণ্ড!!
আমরা পারিনি!
এই সুফলা মাটির শরীর ফুঁড়ে ততোদিনে নিশ্চয় জন্মেছেন আরেক রাম মোহন,আরেক ঈশ্বর চন্দ্র,ক্ষুদিরাম, সুভাষ বসু, আরেক রবীন্দ্রনাথ??
জন্মেছেন সূর্য সেন,প্রীতিলতা, বেগম রোকেয়া,শেখ মুজিব!
জন্মেছেন নূর হোসেন!!
শতবর্ষ পরে সমৃদ্ধ বাংলায়!
আমার কবিতা যদি ধুলোয় লুটোই!!
তবু মাছ-ভাতে!বাঙালি বাঁচুক!
গোলাপের গন্ধে বাঁচুক স্বপ্নবান মানুষ!
শুদ্ধ-স্নিগ্ধ ভালোবাসায় বাঁচুক!
বৃক্ষেরা সবুজ হোক আরো!
শতবর্ষ পরে!...শতবর্ষ পরে!...
-তসলিমা নাসরিন!
শত বর্ষ পরে এই কবিতাটি কেউ না কেউ পড়বে!
যে পড়বে সে যদি নারী হয়
সে কি তখনো কেবল নারী- ই??!
ধরে নিচ্ছি নারী নয়!
সে তখন আদ্যোপান্ত মানুষ!
সে আর চার দেওয়ালে বন্দি নেই!
তার পায়ে যে সহস্র বছরের শেকল ছিল সে শেকল নেই!
তার হাতে যে কুর্সি কাঁটা আর খুন্তি ছিল!
নেই!
হাতে উঠেছে কলম কাস্তে কোদাল আর কলকব্জা!
সে মানুষের মত হাঁটে,দৌড়ই, হা-হা হাসে!
মাছের মুড়ো খায়!
দুধের সরও!..
তাকে আর ভুগতে হয় না পুষ্টিহীনতায়!
সে যদি নারী হয়!
তাকে কেউ পাঠশালায় না পাঠিয়ে ঠেলে দিতে পারছে না জ্বলন্ত উনুনের কাছে!
তাকে আর পরাতে পারছে না বাল্যবিবাহের ফাঁস!
তাকে আর আবৃত করতে পারছে না ভূতুড়ে বোরখায়!
সে নিশ্চয় তখন দাবি করতে পারে সমান উত্তরাধিকার!
সে নিশ্চয় তখন দাবি করতে পারে জরায়ুর স্বাধীনতা-কন্যা জন্ম!
সে নিশ্চয় তখন দাবি করতে পারে চাঁদ বা সূর্যের নিচে অবাধ বসবাস!
যে পড়ছে এই কবিতা!
সে নারী বা পুরুষ হোক!
সে নিশ্চয় ধর্মের গ্রাস থেকে ইতিমধ্যে মুক্ত!
তাকে আর পাঁচ বেলা কপাল ঠুকতে হয় না মেঝে!
তাকে আর প্রসাদ খেতে হয় না ঠাকুরের!
মসজিদ-মন্দির ভেঙে গজিয়ে গেছে মনোলোভা ফুলের বাগান!
জুসমে জুলুসে নেই পীরের মাজার নেই!
স্বৈরাচারের উৎপাত নেই!
কাঁটাতার নেই!
বদলে দিগন্ত অবধি রজনীগন্ধার ঘ্রাণ!
মুগ্ধ ভালোবাসা!
শতবর্ষ পরে!...
নেতার বাড়িতে, শিক্ষাঙ্গনে, শহরে,গ্রামে কৃত্রিমদ্রিম বর্ষণ চলে গুলির??
ককটেলের!!
দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্য, ক্ষরা,ঘূর্ণিঝড়,সন্ত্রাসের দেশে অক্ষত আছে কি শহীদ মিনার??
স্বোপার্জিত স্বাধীনতা!?
অপরাজেয় বাংলা,জয়দেবপুরের মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিসৌধ??
তখনো কি একুশের ভোরে
খালি পায়ে ভিড় করে অগুণন বাঙালি??
তখনো কি বৈশাখে, শরৎে, অঘ্রাণে,ফাগুনে উৎসব হয়??
প্রথম প্রভাতের সাদা মেঘের নবান্নের ঝরাপাতার আহার??
তখনো কি মানুষ,মানুষের জন্য গান গায়??কাঁদে???
যে তুমি পড়ছো এ কবিতা!!
তুমি কি জানো??
শত বছর আগে কি ভীষণ স্বপ্নহীন অন্ধকারে একাকি হেঁটেছিলাম নত- লুচ্চো -নষ্ট মানুষেরা??
দারিদ্র্যে, পারমানবিক ধোঁয়ায়, অশিক্ষায়,অজ্ঞতায়,জ্বরায়, ব্যাধিতে ক্লান্ত-ক্লিষ্ট!
তুমি বা তোমরা নিশ্চয় হাতের মুঠোয় নিতে পারো সততা ও সমতার আলোকিত ব্রহ্মাণ্ড!!
আমরা পারিনি!
এই সুফলা মাটির শরীর ফুঁড়ে ততোদিনে নিশ্চয় জন্মেছেন আরেক রাম মোহন,আরেক ঈশ্বর চন্দ্র,ক্ষুদিরাম, সুভাষ বসু, আরেক রবীন্দ্রনাথ??
জন্মেছেন সূর্য সেন,প্রীতিলতা, বেগম রোকেয়া,শেখ মুজিব!
জন্মেছেন নূর হোসেন!!
শতবর্ষ পরে সমৃদ্ধ বাংলায়!
আমার কবিতা যদি ধুলোয় লুটোই!!
তবু মাছ-ভাতে!বাঙালি বাঁচুক!
গোলাপের গন্ধে বাঁচুক স্বপ্নবান মানুষ!
শুদ্ধ-স্নিগ্ধ ভালোবাসায় বাঁচুক!
বৃক্ষেরা সবুজ হোক আরো!
শতবর্ষ পরে!...শতবর্ষ পরে!...