অঙ্গরাগ (কসমেটিক) সার্জারি কী? কসমেটিক ও প্লাস্টিক সার্জারির মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে?
গ্রীক শব্দ ‘‘কসমেটিকস’’; যার মানে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। মানে সোজা কথায় সুন্দরী/সুন্দর হওয়ার উদ্দ্যেশ্যে যে সার্জারি সেটাই কসমেটিক সার্জারি!
আর প্লাস্টিক সার্জারি কথাটা এসেছে গ্রীক ‘‘প্লাস্টিকস’’ থেকে যার অর্থ আকার ও আকৃতির পরিবর্তন করা। যেহেতু প্লাস্টিক সার্জারি পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি অঙ্গ বা ‘‘টিস্যুর’’ আকৃতির পরিবর্তন করা হয়, তাই এসব সার্জারিকে ‘‘রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি’’ও বলা হয়। কসমেটিক সার্জারিতেও পরিবর্তন হয় তবে উদ্দেশ্য টা হলো আরো বেশী সুন্দর করা।
উদাহরণ দেই, কেস ১ঃ রোগীর ঠোট দুটো কোন কারণে আগুনে পুড়ে ত্বকের কোষগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে সার্জারি করাতে হল। এটা প্লাস্টিক সার্জারি
কেস ২ঃ রোগী অনেক দিন ধরে ভাবছে ওর ঠোট গুলো একটু বেশী মোটা, ফুলা ফুলা লাগে দ্যাখতে, বয়ফ্রেন্ডও এই ব্যাপারে খোঁটা দিয়েছে। নিজের ইচ্ছায় ঠোট ভালো-সুস্থ থাকার পর ও শুধুমাত্র আকর্ষণীয়/সেক্সি হতে সার্জারী করিয়ে ঠোটের সাইজ ঠিক করালো। এটা কসমেটিক সার্জারি।
মানে, কসমেটিক সার্জারি টা হলো প্লাস্টিক সার্জারির একটা প্রকার।
প্লাস্টিক সার্জারি চলছে সেই খ্রিষ্ট পূর্ব থেকে, আর কসমেটিক কয়েক শতক ধরে বিখ্যাত হল মাত্র।
যেই যাই বলুক আমি কিন্তু সুন্দরের পূজারী (সুন্দরী পড়ুন!)৷ সুন্দর মানুষকে ভালো লাগার ব্যাপার টা সেই আদিম যুগ থেকে -ঠিক কবে থেকে তা ভেবে কূল পাই না। এই ধরুন আজকাল আমি নিজেকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে কত কী করি! চুলের স্পাইক, হেয়ার জেল, ভালো-খারাপ না জানা কোম্পানির ফেস ওয়াশ, শ্যাম্পু, সাবান, হেয়ার জেল, ফেস ক্রীম, সানব্লক আগডুম বাগডুম কত কী!
এসব ব্যাপার ক্ষনস্থায়ী!
এবার ভাবুন কোন অভিনয় শিল্পী যার স্থায়ী সৌন্দর্যের দরকার তিনি কী করবেন। নিজেকে সুন্দর দেখানো জন্য সাহায্য নিলেন অপারেশন করার। লম্বা মোটা নাকটাকে কেটে ছেটে নিজের পছন্দ মত করে বানিয়ে নিলেন, পেটের চর্বিটা কেটে ফেলে দিলেন, স্তনগুলো সুডৌল/ আকর্ষনীয় করতে অন্য জায়গা থেকে কেটে কুটে চর্বি লাগিয়ে নিলো, চা বানাতে গিয়ে পুড়ে যাওয়া হাতের ত্বকটা সরিয়ে নতুন লাগিয়ে নিলো, টাক মাথা ঢাকতে নতুন চুল লাগিয়ে নিলো... আরো কত কী! আজকাল একটু হাস্যকরও বটে। তবে এসব এই প্লাসিক সার্জারির শুরুটা হয়েছিল অন্যভাবে, যেমন ধরুন কোন শ্রমিক কারখানায় কাজ করতে গিয়ে মুখে এসিড পড়ে পুড়ে গেল। এই পোড়া-হনুমানেত মত অদ্ভুত মুখ নিয়ে সে কী সমাজে ভালো ভাবে বাচঁতে পারবে? ছোট বাচ্চাকাচ্চারা দেখলে বরং ভয় পেয়ে কান্না করবে! তাই চিকিৎসকগণ অনেক ভেবে চিন্তে এই সার্জারি টা করলেন।
এ ছাড়া প্লাস্টিক সার্জারি’র মাধ্যমেঃ
জন্মগত ঠোট কাটা ( বিঃদ্রঃ এখানে ঠোটকাটা মানে স্পষ্টবাদী নয়!)
কাটাতালু
বাড়তি আঙ্গুল,
জোড়া আঙ্গুল,
দুর্ঘটনা/আঘাতের/ক্যান্সার বা টিউমার অপসারণের পর শরীরের যে কোন স্থানের পুনর্গঠন
পুড়ে যাওয়া ত্বকের চিকিৎসা
এমন আরো অনেক ব্যাপার করা যায়
তবে বেশির ভাগ মানুষ প্লাস্টিক সার্জারি এবং কসমেটিক সার্জারিকে গুলিয়ে ফেলেন। কিছু ক্ষেত্রে এই দুটি শাখার মধ্যে মিল থাকলেও এদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। তাছাড়া প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে শারীরিক সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে যেসব বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, সেসবও মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর একটি বড় কারণ। অনেক বিজ্ঞাপনেই স্তন, নাক, চোখ ইত্যাদি অঙ্গের আকৃতি পরিবর্তনের মাধ্যমে শারীরিক সৌন্দর্য বর্ধনকে প্লাস্টিক সার্জারি নামে চালিয়ে দেয়া হয়। যদিও এসব আসলে কসমেটিক সার্জারির ব্যাপার।
প্লাস্টিক সার্জারি হল পুনর্গঠনমূলক চিকিৎসাপদ্ধতি, যেটি শরীরের কর্মক্ষম নয় এমন কোনো অংশের ওপর প্রয়োগ করা হয়। যেমন ধরুন, কারও হাত যদি আগুনে বাজেভাবে পুড়ে যায় তাহলে পুড়ে যাওয়া হাতের ত্বক বা ক্ষতিগ্রস্থ টিস্যু পুরোপুরি অকেজো হয়ে যাবে। তখন সেই ক্ষতিগ্রস্থ ত্বক কেটে সুস্থ ত্বক লাগানোর কাজটা করা হয় প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে।
তাছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণে যদি কারও স্তন কেটে ফেলা হয়, তখন কেটে ফেলা স্তনের স্থলে নতুন করে স্তন পুনর্গঠন করা হয় প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে।অন্যদিকে কসমেটিক সার্জারির মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা এবং এই ধরনের সার্জারি সাধারণত প্রয়োগ করা হয় শরীরের কর্মক্ষম কোনো অংশের ওপর।
যেমন ধরুন, কোনো এক ব্যক্তির নাক একটু বেশিই বড়। সে কারণে তাকে প্রতিনিয়ত বন্ধুদের কথা শুনতে হয়। ইচ্ছে করে তিনি একদিন সার্জারির মাধ্যমে তার নাকের আকৃতি কিছুটা ছোট করে নিলেন। যেহেতু তার নাক আগে থেকেই পুরোপুরি কর্মক্ষম ছিল এবং তিনি শুধুমাত্র বাহ্যিক আকৃতি পরিবর্তন করেছেন, তাই তার এই সার্জারিকে বলা হবে কসমেটিক সার্জারি
জটিল ভাবে বললে, সব কসমেটিক সার্জারিঈ প্লাস্টিক সার্জারি, কিন্তু সব প্লাস্টিক সার্জারি কসমেটিক সার্জারি নয়!
বছর খানেক আগে, সানাই নামের একজন অভিনয় শিল্পী কসমেটিক সার্জারি করিয়েছেন। স্তনের সাইজ ৩৬ থেকে বাড়িয়ে ৪৪ করেছেন। তিনি কোন এক টক-শো'তে প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ব্রেষ্ট ইম্পলান্টেশন সার্জারিটা করিয়ে তথা স্তনের আকার বাড়িয়ে তার দৈহিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং তিনি এটা নিয়ে খুব কনফিডেন্ট! এমন কথার প্রতিবাদ করে বাংলাদেশের মিডিয়া পত্র পত্রিকা অনলাইন নিউজ পেপার, ফেসবুকে বেশ তোলপাড় হল। ট্রল হল, সেই মহিলাকে অপমান করে কত কথার ঝড় হল। যাই হোক, আমার মত স্তনপ্রেমী বখে যাওয়া যুবকগণ তলে তলে বেশ খুশিও হল। এ ব্যাপারে আমার এক নামাজী বন্ধুর সাথে আলোচনা করে কিছু জ্ঞান আহরণ করেছিলাম! বলছিঃ
হাদিসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই নারীর ওপর অভিশাপ দিয়েছেন যে অন্য নারীর মাথায় কৃত্রিম চুল সংযোজন করে বা নিজ মাথায় চুল সংযোজন করায় । আর যে নিজের শরীরে উল্কি আঁকে বা অন্যকে আঁকিয়ে দিতে বলে।’ (সহিহ বুখারি : ৫৯৩৭ )
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে উত্তম অবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা ত্বিন : ৪)।
এরপরও নিজেকে অনাকর্ষণীয় মনে করে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন সাধিত করা হারাম। কুরআনে এটাকে শয়তানের কর্ম বলা হয়েছে- ‘শয়তান বলল- আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব। তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।’ (সূরা নিসা : ১১৮-১১৯)
সম্প্রিতি প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বক্তৃতায় বলেছেন -ভগবানের দেবতা গণেষের মুখ প্লাস্টিক সার্জারি করে তৈরী করা হয়েছিল। আর নেয়া হয়েছিল হাতির। তাই গণেষের মুখটা দেখতে হাতির মুখের মত। হয়ত অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞান এমন কিছু সত্যিই আবিষ্কার করবে!
শুনেছি কসমেটিক সার্জারিতে খুব টাকা পয়সা কামানো যায়। ভাবছি ডার্মাটোলোজিতে পিজি করতে সুযোগ পেলে কসমেটিক সার্জারি শিখে কাড়ি কাড়ি টাকা কামাই করব!