Notification texts go here Contact Us Buy Now!

সাধারণ জ্ঞান পর্ব - ০৪ | ভিয়েনা কনভেনশন

LaBiB

কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশন


____________________________________________
১. প্রশ্নঃ চাইলেই কি রাষ্ট্র কুটনৈতিক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করতে পারে?
২. প্রশ্নঃ ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক সুবিধা ও দায়মুক্তি বর্ণনা করুন।
৩. প্রশ্নঃ Persona non grata কি?
৪. প্রশ্নঃ প্রটোকল কি?
৫. সম্প্রতি পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদদেশের হাইকমিশনারের সিদ্ধান্ত ভিয়েনা কনভেনশনের প্রভিশনের পরিপন্থী- কিভাবে?
৬. কূটনৈতিক কারা?
৭. কূটনৈতিক স্টাফ কারা?
৮. কূটনৈতিকদেরকে প্রদত্ত বিশেষ সুবিধা ও দাযমুক্তি প্রত্যাহার করা যায় কিনা ?
____________________________________________
১. প্রশ্নঃ চাইলেই কি রাষ্ট্র কুটনৈতিক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করতে পারে?
কেস স্টাডিঃ
____________________________________________
(বোঝার জন্যঃ জাল ভিসার সাহায্যে পরিচারিকাকে আমেরিকায় নিয়ে নির্ধারিত পারিশ্রমিকের থেকে কম টাকা দেয়ার অভিযোগে ভারতীয় ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়ে গ্রেফতারের ঘটনায় ভারত-আমেরিকা কুটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে একধরনের টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। দেবযানী খোবরাগাড়ের গ্রেফতারের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে তলব করে ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাবী করেন এবং তার কঠোর ও তীব্র প্রতিবাদ জানান। একই সাথে ভারতে অবস্থিত সকল মার্কিন কুটনৈতিক মিশন এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের সকল প্রকার নিরাপত্তা, দায়মুক্তি ও সুযোগ সুবিধা প্রত্যাহার করে নেন যেসব অধিকার, দায়মুক্তি ও সুযোগ সুবিধা তারা ভিয়েনার কূটনৈতিক সম্পর্কের কনভেনশন অনুযায়ী পেয়ে আসছিল।)
____________________________________________
_____________________________________
ভিয়েনার কূটনৈতিক সম্পর্কের কনভেনশনের গুরত্বপূর্ণ ধারার অালোচনাঃ
_____________________________________
• বিশ্বের অধিকাংশ জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকেই আন্ত:রাষ্ট্রীয় কুটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলেও তার কোন আইনগত স্বীকৃতি ছিল না। ফলে সকল রাষ্ট্রের সার্বভৌম সমতাসহ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা এবং জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ বিষয়ক জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতিকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘভুক্ত রাষ্ট্রসমূহ এক সময়য় একটি সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক আইনগত কাঠামো (কনভেনশন)’র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। যে কনভেনশনের মাধ্যমে কুটনৈতিক সংসর্গ, অধিকার ও দায়মুক্তি নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও সামাজিক ব্যবস্থা নির্বিশেষে জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে। তবে প্রদত্ত অধিকার ও দায়মুক্তি কোনভাবেই ব্যক্তি স্বার্থে নয় বরং কুটনৈতিক মিশনসমূহের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রযোজ্য হবে।
• কুটনৈতিক অধিকার, দায়মুক্তি ও সুযোগ সুবিধা ভোগের ক্ষেত্রে কোন জটিল প্রশ্নের উদ্ভব ঘটলে প্রচলিত প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ রেখে ১৯৬১ সালের ১৮ এপ্রিল ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কূটনৈতিক আদান-প্রদান ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিনিধি সম্মেলনে ভিয়েনার কূটনৈতিক সম্পর্কের কনভেনশন স্বাক্ষরিত হয়।
• ১৯৫৪ সালের ২৪ এপ্রিল এ কনভেনশন কার্যকরী হয় । এই চুক্তির ৫৩টি ধারা রয়েছে।
• বিদেশে নিযুক্ত কূটনীতিবিদদের গ্রহণ করা, স্তর বিন্যাস, বিশেষ অধিকার, দেশের অধিকার ও দায়িত্ব এতে নির্ধারিত বর্নিত হয়েছে। এ কনভেনশন স্বাক্ষরের সাথে সাথে আরও দুটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে।
____________________________________________
• মিশন প্রধানের অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ নিষেধঃ
____________________________________________
এই কনভেনশনের ২২ ধারা অনুযায়ী দুতাবাসে মিশন প্রধানের অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করা যায় না এবং দূতাবাসের ভবন রক্ষা করার দায়িত্ব গ্রহনকারী রাষ্ট্রের।
_____________________________
• দুতাবাসের দলিলপত্র সংরক্ষণঃ
_____________________________
আবার ২৪ ধারা অনুযায়ী দুতাবাসের দলিল পত্র, এমনকি দুতাবাসের বাহিরে সংরক্ষিত দলিলপত্রের সুরক্ষা প্রদান করতে হবে।
_________________________
• অবাধ চলাচলের স্বাধীনতাঃ
_________________________
তাছাড়া, ২৭ নং ধারা অনুযায়ী তাদের অবাধ যোগাযোগের নিশ্চয়তা প্রাদান করতে হবে।
_____________________
• গ্রেফতার করা নিষেধঃ
_____________________
আবার ২৯ ধারা অনুযায়ী দুতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দের নিরাপত্তার বেঘাত করা যায় না অর্থাৎ তাদের গ্রেফতার ও ডিটেনশন থেকে সুরক্ষা প্রদান করেছে।
_____________________
• মামলা হতে দায়মুক্তিঃ
_____________________
৩১ ধারা অনুযায়ী তারা ফৌজদারী মোকদ্দমা, দেওয়ানী মোকদ্দমা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণ থেকে দায়মুক্তি পাওয়ার অধিকারী।
_______________________________
• কতিপয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করাঃ
_______________________________
পাশাপাশি ৩০ ধারা অনুযায়ী তাদের বাসস্থান, যোগাযোগ ও সম্পদের উপর আক্রমণ করা যায় না এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আচরণ ও ভ্রমণ অবাধ থাকবে। তাছাড়া, তারা কর মওকুফ পাওয়া, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় প্রতীক ব্যবহার করার অধিকারী।
_______________________________________
• কনজুলার, পরিবারের সদস্যদের দায়মুক্তিঃ
_______________________________________
১৯৬৩ সালের কনসুলার সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের ৫৩(২) ধারা অনুযায়ী কনসুলার অফিসারদের পরিবারের সদস্য অথবা তাঁর ব্যক্তিগত কর্মচারীরাও ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক দায়মুক্তি ও সুযোগ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী।
((((((কেস স্টাডির উত্তর ১ নং প্রশ্নের জন্য সহায়কঃ আমেরিকায় ভারতীয় কূটনীতিক গ্রেফতার বিতর্কের জল আরও গড়াল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়ে দিয়েছে ওই ভারতীয় কূটনীতিক ভিয়েনা কনভেনশনের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে চুক্তির আওতায় পড়েন না। ফলে কূটনীতিকের গ্রেফতার নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে একমত নয় ওয়াশিংটন। এই ইস্যুকে ঘিরে ভারত-আমেরিকা টানাপোড়েন আরও বাড়বে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
• ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার সকালে। মেয়েকে স্কুলে পৌছে দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়ে। জাল ভিসার সাহায্যে সঙ্গীতা রিচার্ড নামে এক ভারতীয় পরিচারিকাকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। নির্ধারিত পারিশ্রমিকের থেকে পরিচারিকাকে অনেক কম টাকা দিতেন বলেও অভিযোগ। এই অভিযোগে গ্রেফতার হলেও ২লক্ষ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ছাড়া পান তিনি। এই খবর পেয়েই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় নয়াদিল্লি। বিদেশসচিব সুজাতা সিং সমন পাঠান ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে। উচ্চপদস্থ ভারতীয় কূটনীতিকের এই ধরনের অবমাননা একেবারেই মেনে নেয়নি দিল্লি।
• তবে নয়াদিল্লি প্রতিবাদ জানালেও মার্কিন স্বরাষ্ট্রদফতর শনিবার জানিয়ে দিয়েছে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে ভিয়েনা চুক্তিতে যা বলা রয়েছে, তার আওতায় তিনি পড়েন না। ভিয়েনা কনভেনশন অন কনসুলার রিলেশনসের আর্টিকল ৩৬ বলছে, কোনও বিদেশিকে আটক বা গ্রেফতার করলে একটুও দেরি না করে তা দূতাবাস বা কনসুলেটকে জানাতে হবে। আটক বা গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির অনুরোধ অনুযায়ী পুলিশ ফ্যাক্স মারফত দূতাবাসকে জানিয়ে দিতে পারে।সম্ভব হলে গ্রেফতারের কারণ, সময় উল্লেখ করতে পারে পুলিশ। ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়ের গ্রেফতারের সময় আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মানা হয়নি বলেই দিল্লির অভিযোগ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রদফতরের বক্তব্য দেবযানী খোবড়াগাড়ে যা করেছেন তার সঙ্গে ভিয়েনা চুক্তির কোনও সম্পর্ক নেই। তা দেশের আইন ভাঙার সঙ্গে জড়িত। আইন ভাঙার জন্যই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। নয়াদিল্লির দাবি অপমান না করেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।)))))
____________________________________________
ভিয়েনার কূটনৈতিক সম্পর্কের কনভেনশন
(পত্রিকার কলাম থেকে সংগৃহীত)
১৯৬১ সালের ১৮ এপ্রিল ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কূটনৈতিক আদান-প্রদান ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিনিধি সম্মেলনে ভিয়েনার কূটনৈতিক সম্পর্কের কনভেনশন স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৫৪ সালের ২৪ এপ্রিল এ কনভেনশন কার্যকরী হয়।
এই চুক্তির ৫৩টি ধারা রয়েছে। বিদেশে নিযুক্ত কূটনীতিবিদদের বেছে নেওয়া, গ্রহণ করা, স্তর বিন্যাস, বিশেষ অধিকার, দেশের অধিকার ও দায়িত্ব এতে নির্ধারিত হয়। এই ধারার মধ্যে প্রধানত রয়েছেঃ
(১) সংশ্লিষ্ট পক্ষের চুক্তি অনুযায়ী দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা এবং দূতাবাস স্থাপন করা ।
(২) দূতাবাসের দায়িত্ব হলো সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা, সে দেশ ও সে দেশের নাগরিকদের স্বার্থ সুরক্ষা করা, যে দেশে কূটনৈতিক নিযুক্ত করা হয় সে দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা, যে দেশে নিযুক্ত করা হয় সে দেশের অবস্থা খতিয়ে দেখা, নিজ দেশের কাছে সরকারী রিপোর্ট দাখিল করা এবং নিজ দেশ ও গ্রহণকারী দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা ইত্যাদি।
(৩) দূতাবাসে প্রধানত তিনটি পদ আছে, রাষ্ট্রদূত, মিনিস্টার এবং চার্জ দ্যা আফেয়ার্স। এ তিনটি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যে দেশে নিযুক্ত করা হয় সে দেশের অনুমোদন পেতে হয়।
(৪) দূতাবাস ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক অধিকার এবং নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে। দূতাবাস ভবন এবং কূটনীতিবিদদের আক্রমণ করা যায় না। কূটনীতিবিদদের বাসস্থান আক্রমণ করা যায় না, তা সুরক্ষা করা হয়।
এ চুক্তি স্বাক্ষরের সাথে সাথে আরও দুটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে দূতাবাসের বিশেষ অধিকার ও নিরাপত্তা এইভাবে নির্ধারিত হয়েছে যে, দূতাবাসের ভবন আক্রমণ করা যাবে না, দলিল পত্র আক্রমণ করা যাবে না, তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে অবাধ। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আচরণ ও ভ্রমণ অবাধ থাকবে, কর মওকুফ করা হবে, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় প্রতীক ব্যবহার করা ইত্যাদি। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বিশেষ অধিকার ও নিরাপত্তা প্রধানতঃ তাদের নিরাপত্তার বেঘাত করা যায় না, বাসস্থান এবং সম্পদ আক্রমণ করা যায় না। যে দেশে কূটনীতিবিদ নিযুক্ত করা হয়, সেদেশের ফৌজদারী মোকদ্দমা, দেওয়ানী মোকদ্দমা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণ থেকে তাঁরা রেহাই পান। তাদের কর ও শুল্ক মওকুফ করা হয়।
১৯৭৫ সালের ২৫ অক্টোবর চীন এ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সে বছর ২৫ ডিসেম্বর এই চুক্তি চীনে কার্যকরী হয়।
____________________________________________
২. প্রশ্নঃ ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক সুবিধা ও দায়মুক্তি বর্ণনা করুন।
_________________________________________
২. সুবিধা ও দায় মুক্তিঃ (পূর্বে বর্ণিত ধারার সাথে মিলিয়ে নিবেন)
_________________________________________
১) ব্যক্তিগত নিরাপত্তা
২) ফৌজদারী এখতিয়ার হতে দায়মুক্তি
৩) দেওয়ানী ও প্রশাসনিক এখতিয়ার হতে অব্যাহতি
৪) কর প্রদান হতে অব্যাহতি
৫) যোগাযোগের স্বাধীনতা: কূটনৈতিক প্রতিনিধির দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য নিজ দেশের সাথে এবং অন্যত্র যোগাযোগের জন্য তাঁর পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে।
____________________________________________
৩. প্রশ্নঃ Persona non grata কি?
_____
উত্তরঃ
_____
পার্সোনা নন গ্রাটা (ল্যাটিন: Persona non grata) শব্দের আক্ষরিক অর্থ অবাঞ্চিত বা অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। কূটনীতিতে পার্সোনা নন গ্রাটা বলতে এমন বহির্দেশীয় ব্যক্তিকে বোঝায় যার নির্দিষ্ট কোন একটি রাষ্ট্রে অবস্থান ও প্রবেশ ঐ রাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সংক্ষেপে পার্সোনা নন গ্রাটা বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি গ্রাহক রাষ্ট্র কর্তৃক অগ্রহণযোগ্য ও অবাঞ্চিত ঘোষিত হয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তি অবাঞ্চিত বলে ঘোষিত হলেই ঐ দেশ থেকে "প্রত্যাহারযোগ্য" বলে বিবেচিত হবে।
(উৎসঃ উইকিপিডিয়া)
____________________________________________
__________________
ইরান মামলা (১৯৮০)
__________________
ইরানের তেহরানে স্তাপিত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনে শ খানেক উত্তেজিত ছাত্র এবং প্রায় ৫০ জন জঙ্গি ঢ়ুকে পড়ে। ইরানের কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কোন অনুমতি দেয়নি এবং বাধাও দেয়নি। তারা মিশনের অঙ্গনে প্রবেশ করে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখে এবং কাগজপত্র জব্দ করে। যুক্তরাষ্ট্র আন্তজার্তিক আদালতে মামলা দায়ের করে।
বিচার্য বিষয়
১) যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশন অঙ্গন রক্ষ করার কোন বাধ্যবাধকতা ইরান কর্তৃপক্ষের ছিল কিনা?
২) ইরান যুক্তরাষ্ট্রের মিশনের ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী কিনা?
রায়:আদালতের সিন্ধান্ত হচ্ছে যে, মিশনটির অঙ্গন রক্ষা করার বাধ্যবাধকতা ইরানের রয়েছে। যেহেতু ইরান কর্তৃপক্ষ তা করেনি তাই তারা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।
এর পেছনে যুক্তি হচ্ছে যে,১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ২২(১) ও(২) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
____________________________________________
______________________________
Persona Non Grata এর ব্যবহারঃ
______________________________
১৯৬১ সালের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, গ্রাহক রাষ্ট্র প্রেরক রাষ্ট্রকে যেকোন সময়ে এই মর্মে নোটিশ প্রদান করতে পারে যে, মিশন-প্রধান, কোন কূটনৈতিক কর্মচারী বা অন্য কাজে নিয়োজিত কর্মচারীকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ একতরফা নোটিশ প্রদানের জন্য গ্রাহক রাষ্ট্রকে কোন কারণ দর্শাতে হবে না। গ্রাহক রাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাবার পূর্বে কোন ব্যক্তিকে পার্সোনা নন গ্রাটা ঘোষণা করা যাবে।
এসব ক্ষেত্রে প্রেরক রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রত্যাহার করবে অথবা উক্ত মিশনের সাথে তার সম্পর্কচ্ছেদ ঘটাবে।
____________________________________________
৪. প্রোটকল কি?
___________
প্রোটকলঃ
___________
প্রটোকল পারিভাষিক অর্থে প্রটোকল হলো পদস্থ কোন সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক প্রস্ত্ততকৃত ও যথারীতি সত্যায়িত লেনদেন বা চুক্তি ইত্যাদি সংক্রান্ত মূল মন্তব্য বা কার্যবিবরণী। এই বিবরণী পরবর্তী যেকোন দলিলকে বৈধতা প্রদান করে। কূটনৈতিক ভাষায় প্রটোকল হলো সরকারি অনুষ্ঠানে এবং অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান কর্তৃক পালনীয় আনুষ্ঠানিক শিষ্টাচারবিধি।
দেশের অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান এবং কার্যক্রমেও প্রটোকল থাকে। প্রাচীন ও মধ্যযুগের রাজন্যবর্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বিস্তারিত প্রটোকল অনুসরণ করতেন। কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধির ক্ষেত্রে প্রটোকল প্রণালী আধুনিক রাষ্ট্রে আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত। কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশন (১৯৬১, যাতে বাংলাদেশও স্বাক্ষরকারী) দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের সফরের সময় অনুসরণীয় বিধিমালা ও আনুষ্ঠানিকতা নির্ধারণ করে দিয়েছে। অধিকন্তু, বাংলাদেশও কোনো বিদেশি রাষ্ট্র/সরকার প্রধানের সফরের সময় এবং কোনো বিদেশি দূতাবাস প্রধানের প্রথম বাংলাদেশে আগমনের সময় বিস্তারিত প্রটোকল ও আনুষ্ঠানিকতা পালন করে। এ ধরনের সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বিমানবন্দরে ভি.ভি.আই.পি/ ভি.আই.পি কক্ষের ব্যবহার এবং সকল কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তির পদমানক্রম অনুসরণ করে থাকে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশনসমূহের প্রধানদের, যেমন রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও বাংলাদেশে অবস্থানরত অন্যান্য দূতাবাস/ হাইকমিশন/ কনস্যুলেট, জাতিসংঘ ও বিশেষ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের পারস্পরিক ভিত্তিতে বিশেষ কিছু কূটনৈতিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল বিভাগ বাংলাদেশ সরকারের প্রটোকল সংক্রান্ত বিষয়সমূহ তদারকি এবং সেগুলোর সমন্বয় সাধন করে।
(উৎসঃ বাংলাপিডিয়া)
____________________________________________
_________________________________________
৫. পাকিস্তান কর্তৃক ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘনঃ
_________________________________________
কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ঐতিহাসিক ভিয়েনা কনভেনশনের আলোকে কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং মিশনগুলোর কিছু সুবিধা ও দায়মুক্তির বিষয় বিদ্যমান রয়েছে। কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে যেমন গ্রহীতা রাষ্ট্রের আইনের আওতায় আনা যায় না, তেমনি গ্রহীতা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করলে কিংবা সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটতে পারে এমন কোনো কাজ করলে ওই ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তিবর্গকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার অধিকারও গ্রহীতা রাষ্ট্রের রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, গত বছর যে দুজন পাকিস্তানি কূটনীতিককে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নিতে বলা হয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে এ দেশে জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতার সুস্পষ্ট অভিযোগ ছিল। কিন্তু এর প্রত্যুত্তরে পাকিস্তান সে দেশের বাংলাদেশ হাইকমিশনের ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার সপক্ষে কোনো যুক্তি প্রদর্শন করতে পারেনি, যা এককথায় কূটনীতিবিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থী। উপরন্তু বাংলাদেশে আবরার আহমেদ খানকে আটকের ঘটনার পর সম্প্রতি বাংলাদেশ মিশনের কর্মী জাহাঙ্গীরকে অপহরণ করে পাকিস্তান কেবল কূটনৈতিক আইনই ভঙ্গ করেনি; বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনেরও চরম লঙ্ঘন ঘটিয়েছে।
____________________________________________
প্রশ্ন-৪ কুটনীতিক কারা? কুটনীতিকের সুবিধা ও দায়মুক্তি সমুহ বর্ণনা কর। এই সুবিধা ও দায়মুক্তি কি আন্তজার্তিক সংগঠন ও কনসালটেন্ট এর জন্য প্রযোজ্য? এসব সুবিধা ও দায়মুক্তি কি প্রত্যাহার করা যায়? কুটনীতিকগন কর্তৃক এ সুবিধা অপব্যবহারের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কি কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায়?
______________
কূটনৈতিক কারা:
______________
''Diplomacy" বা কূটনীতি শব্দটি গ্রীক ভাষা হতে উদ্ভূত যার অর্থ হচ্ছে আলোচনার মাধ্যমে আন্তজার্তিক সম্পর্ক পরিচালনা। তাই কূটনৈতিক প্রতিনিধি বলতে আন্তজার্তিক সম্পর্ক পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিগনকে বুঝায়। প্রাচীন কাল হতেই কূটনৈতিক প্রতিনিধির প্রচলন চলে আসছে। ১৮১৫ সালের ভিয়েনা কংগ্রেস এবং ১৮১৮ সালের সম্মেলনে কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের নি¤েœাক্ত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে-
- রাষ্ট্রদূত(Ambassador)
বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা দূত
- আবাসিক দূত
- চার্জ দ্য এফেয়ার্স
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত ব্যাপারে আলোচনা অনষ্ঠিত হয় সেই প্রক্রিয়াকে কুটেনৈতিক বলা হয়। কুটনৈতিক হচ্ছে স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহের সরকারের মধ্যে সরকারী পর্যায়ে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৌশল ও বুদ্ধমত্তার প্রয়োগ। কুটনৈতিক হচ্ছে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আন্তজার্তিক সম্পর্ক পরিচালনা।
• কুটনৈতিক স্টাফঃ কূটনৈতিক প্রধানের অধীনে বেশ কিছু সংখ্যক স্টাফ থাকেন যাদিও অধিকাংশই প্রেরনকারী দেশের নাগরিক। মিশনে দুই ধরণের স্টাফ দেখা যায়।
১) কুটনৈতিক
২) অকুটনৈতিক
১) কুটনৈতিকঃ মিশন প্রধান ছাড়া কাউন্সেলার, প্রথম,দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেক্রেটারী এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরি যথা, সামরিক,রাজনৈতিক ইত্যাদিও এ্যাটাচে কূটনৈতিক স্টাফ।
২) অকুটনৈতিকঃ প্রশাসনিক, কারিগরি ও সেবক কর্মচারীগন অকূটনৈতিক।
কূটনৈতিক স্টাফের সকলেই এবং অকূটনৈতিক স্টাফের অধিকাংশ নিজ দেশের নাগরিক। তবুও তুলনামূলকভাবে কূটনৈতিক স্টাফ বেশী সুযোগসুবিধা ভোগ করে। কতিপয় কর্মচারী যেমন, অভ্যর্থনাকারী, অনুবাদক, গাড়ীচালক, গার্ড ইতাদি গ্রাহক দেশের নাগরিকদের মধ্য হতে নিয়োগ করা হয় এবং তাদেরকে স্থানীয় স্টাফ বলে। যদিও তারা একই মিশনের স্টাফ তবুও কূটনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য হয় না এবং কোনরুপ সুযোগ সুবিধা ভোগ করে না।
____________________________________________
৮. কূটনৈতিকদেরকে প্রদত্ত বিশেষ সুবিধা ও দাযমুক্তি প্রত্যাহার করা যায় কিনা ?
_____
উত্তরঃ
_____
কূটনৈতিকদেরকে তাদের কর্মের প্রকৃতি ও গুরুত্ব বিবেচনা করে বিশেষ সুবিধা ও দায়মুক্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। কাজেই অযথা কোন রাষ্ট্র বিদেশী কূটনৈতিকদের প্রদত্ত সুযোগসুবিধা ও দায়মুক্তি প্রত্যাহার করতে পারে না। তবে অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় কোন কূটনৈতিক যদি গ্রাহক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে তবে সে দেশের কাছে তা অগ্রহনযোগ্য হতে পারে। এরুপ আপত্তিজনক কার্যকলাপের জন্য গ্রাহক দেশের সরকার তাকে পারসোনা নন গ্রাটা বা অবাঞ্চিত ব্যক্তি ঘোষনা করতে পারে এবং তাকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তার সরকারকে কোন ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ভিয়েনা কনভেনশনের ৩২ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রেরক রাষ্ট্র ইচ্ছা করলে লিখিতভাবে তার প্রতিণিধিদের প্রাপ্য ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধা ও দায়-মুক্তি শিথিল করতে পারে।

About the Author

LaBiB
Bangladesh Writter Society

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.