#সাইন্স থেকে 'ঘ' ইউনিট নিয়ে বিস্তারিত"
এইচএসসির পর সাইন্স থেকে মেডিকেল/বুয়েট/ভার্সিটি কয়েকটা পথ আছে। মেডিকেল বা বুয়েট নিয়ে আমার আলোচনা না। ভার্সিটির 'ক' ও 'ঘ' নিয়ে অনেক স্টুডেন্টদের মধ্যে দ্বিধা থাকে কোনদিকে গেলে ভালো হবে৷ অনেকে পর্যাপ্ত গাইডলাইন না পেয়ে সময় যাওয়ার পর ঠিকই আফসোস করে আগে যদি জানতো তাইলে ভালো এক জায়গায় নিশ্চয় থাকতে পারতো। এজন্য সেগুলোর তুলনামূলক দিকগুলো আলোচনা করলাম। নিজেদের যোগ্যতার উপর আমরা প্রস্তুতি নিতে পারব।
সাইন্স থেকে 'ক' ইউনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ সীট ১৭৬৫। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষা দেয় প্রায় ৯০ হাজারেরও উপরে স্টুডেন্ট। আর এদের মধ্যে জিপিএ-৫ এর মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি তে উভয়টাতে জিপিএ-৫ থাকবে নূনতম ৪০ হাজার স্টুডেন্ট। গোল্ডেন থাকবে নূন্যতম ১০-১৫ হাজার স্টুডেন্ট। তাইলে যাদের দুটিতে গোল্ডেন আছে তাদেরই নিশ্চয়তা নেই।
প্রতিযোগিতাটা কিরকম হয় কল্পনা করা যায়না। প্রায় সব ভার্সিটিতেই এমন প্রতিযোগিতা। তাই সাইন্স থেকে ভার্সিটি 'ক' ইউনিট প্রিপারেশন নিতে আমি তাদের ই উপদেশ দিতে পারি যাদের রেজাল্ট ভালো থাকে এবং সাইন্সের সাবজেক্টগুলোতে দুর্বলতা থাকেনা। যেকোন প্রতিযোগিতায় তাদের অবস্থান থাকার মতো যোগ্য হতে পারে। তাদের জন্য 'ক' ইউনিট মূলত।
তাই অযথা আবেগে বা হুজুগে পড়ে দেখাদেখি 'ক' ইউনিট না নিয়ে নিজের অবস্থান সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেও। না হয় তিন চারমাস পর বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে । তখন হয়তবা আফসোস করবে সঠিক গাইডলাইন টা পেলে হয়তবা এমন ভুল করতে না।
তাই আমি যেই বিষয়টা দেখাব সেটা হচ্ছে সাইন্স থেকে 'ঘ' এর প্রস্তুতি। যদি স্বপ্নটা কোন পাবলিক ভার্সিটি থাকে তাইলে ঘ ইউনিট এর চেয়ে সহজ কোন মাধ্যম নাই। আর ঢাবির 'ঘ' ইউনিট মূলত সাইন্সের জন্য। এক কথায় বলতে গেলে নূনতম একটা জিপিএ নিয়ে যদি তিন চারটা মাস সিরিয়াসলি পড়ালেখা করো ঢাবিতে না হলেও দেশের পাবলিক ভার্সিটি তে চান্স নিশ্চিত বলা যায়। সবাই বলে ভার্সিটির খ ইউনিটে চান্স পাওয়া সহজ। কিন্ত আমি বলি সাইন্স থেকে ঘ ইউনিটে চান্স পাওয়া তার চেয়েও সহজ।
এখন ঢাবির ঘ ইউনিট এর চিত্রটা দেখি।
সীট সংখ্যা ১১৫০ এর মতো। এখানে সাইন্স থেকে যারা পরীক্ষা দেয় তাদের বেশিরভাগ ই সম্পূর্ণ প্রিপারেশন থাকেনা। প্রথমদিকে মেডিকেল, বুয়েট, ভার্সিটি ক ইউনিট থেকে ছিটকে সামান্য ১০/১৫ দিনের প্রিপারেশন নিয়েই অধিকাংশ স্টুডেন্ট পরীক্ষা দেয়। যেহেতু এই সময়ের প্রিপারেশন কখনোই সম্ভব না। এই অল্প দিনের প্রিপারেশনে এই তিন সাব্জেক্ট এর শুধুমাত্র সিলেবাস চোখ বুলাতেই চলে যাবে। সেজন্য এদের মধ্যে চান্স তেমন আসেনা। অনেককে দেখা যায় ইংলিশ এ পাশ করলে সিরিয়াল চলে আসে কিন্ত ভাল সাবজেক্ট আসেনা। তখন আফসোস করে আরেকটু সময় নিয়ে পড়লেই ভাল একটা সাবজেক্ট চলে আসতো। আর এখানে তারাই চান্স পায় যাদের নূন্যতম একটা রেজাল্ট আছে আর এইচএসসি এর পর সময়টা একটু সিরিয়াসলি পড়ালেখা করে এবং ভালো পজিশনও অর্জন করে। সুতরাং, নি:সন্দেহে বলা যায় দুইটা গোল্ডেন নিয়েও যতই পড়ালেখা করো চান্সের সম্ভাবনা যদি ১০% থাকে সেখানে ঘ ইউনিটে একটু সিরিয়াস পড়ালেখায় চান্সের সম্ভাবনা বলা যাবে ৯০%।
বুঝতেই পারছো সাইন্স থেকে যাদের জিপিএ তেমন ভাল না বা সাইন্সের সাবজেক্টগুলোতে এতোটা দক্ষ না তাদের সামনে কত সুবর্ণ সুযোগ আছে। হুদাই কেন অন্ধ বিশ্বাসের পিছনে দৌড়াবে। সুতরাং, যেকোন অবস্থান থেকে ঘ ইউনিট প্রিপারেশন নিতে চাইলে অলওয়েজ স্বাগতম।
আবার অনেকের ধারণা সাইন্স পড়ে আর্টসের সামান্য সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশুনা করব?? দরকার হলে লেখাপড়াই করব না বা নেশনাল ভার্সিটিতে সাইন্সের সাবজেক্ট পড়ব তাও আর্টসের সাবজেক্ট পড়ব না। এই চিন্তা যাদের থাকে তাদের বলব আগে এই সামান্য সাবজেক্টটা ই অর্জন করো তারপর বুঝবে এর মর্যাদা কতটুকু।
প্রথমেই সাবজেক্ট এর বিষয়টা দেখাই। সাইন্সের জন্য ঢাবির সবচেয়ে সম্মানিত ফ্যাকাল্টি এফবিএস এর প্রতিটি সাবজেক্ট এ পড়ার সুযোগ আছে সাইন্সের স্টুডেন্টদের। আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ড এর Law, Economics, English, IR, Development studies সহ অনেক সাবজেক্ট আছে যা সাইন্স থেকে কোন অংশে কম না।
আর বড় সুবিধা হল আপনি এখন সাইন্স এর সাবজেক্ট নিয়ে পড়লেন। পড়ার উদ্দেশ্য কি? বড় বিজ্ঞানবিদ হওয়া? নাকি দেশের ভালো জব মার্কেটেই যাওয়া। চার-পাঁচ বছর পর ঠিকই দেশের চাকরির জন্য এই বাংলা, ইংলিশ, সাধারণ জ্ঞানই পড়তে হবে। তাই এখন থেকে এই বাংলা, ইংলিশ, জিকে ভালো করে পড়লে চাকরির জন্য তেমন নতুন কিছু পড়তেই হয়না। অন্যান্য গ্রুপের স্টুডেন্টদের চেয়ে এমনিতেই এগিয়ে থাকবে। কারণ তাদের সাইন্স/ম্যাথে দুর্বল থাকবে কিন্ত সাইন্সের স্টুডেন্টদের সেটা থাকবেনা।
সুতরাং বুঝতেই পারছো সাইন্স থেকে ঘ ইউনিট প্রিপারেশন নেওয়া কোন অংশেই ক্ষতি নাই। এটাই বাস্তবতা। পরে যেন আফসোস করতে না হয় তাই এখন ই আসল চিত্রটা এখন বুঝে সিদ্ধান্ত নেও।
আবার এরকম দেখা যায় অনেকেই ক ও ঘ দুটি একসাথে প্রিপারেশন নিতে যায় ডাবল চান্স মনে করে। সত্যি বলতে এটার চেয়ে বোকামি আর কিছু নেই। দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন নৌকায় পা দিয়ে চললে এক নৌকাতেও স্থান হবেনা এটাই বাস্তব। এখানে দুটি ইউনিট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক ইউনিটে সাইন্সের সাবজেক্ট পড়বে। আর ঘ ইউনিটে আর্টসের সাবজেক্ট। সুতরাং, ভালো করে একটা নেওয়ার মতো সময় ই পাবেনা আবার দুটি। এই বোকামি করতে যেওনা।
ক্যারিয়ার তোমার, সিদ্ধান্ত তোমার ই নিতে হবে। আগে নিজের লক্ষ্য স্থির করো তারপর সেই অনুযায়ী কাজ করো। এছাড়াও যেকোনো জিজ্ঞাসা থাকলে জানাতে পারেন। অনুলিপি